সুলেখা আক্তার শান্তা :
জীবনে তখন কৈশোর পেরিয়ে যৌবনের প্রতিধ্বনি। প্রকৃতি পরিবেশ প্রতিদিন ধরা দেয় বিচিত্র রূপে। রাকিব ছাদে কয়েকটি গাছ লাগিয়েছে। পানি দেওয়া, পরিচর্যার জন্য প্রতিদিন ছাদে উঠেতে হয় তাকে। হঠাৎ একদিন লক্ষ্য করে ছাদের এক কোনায় দাঁড়িয়ে একটা মেয়ে তার কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করছে। রাকিব না দেখার ভান করে নিজের কাজ করে যায়। মেয়েটি সুন্দরী। সাজ পোশাক তাকে আরো সুন্দর করে তুলেছে। কদিন একই ঘটনা ঘটে। মেয়েটির নির্বাক চাহনি তাকে কৌতুহলী করে তোলে। একদিন সামনে এগিয়ে গিয়ে রাকিবকে বলে, তুমি কে? তোমার নাম জানতে পারি। মেয়েটি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, আমার নাম আফসানা। আফসানার সেই অপলক দৃষ্টি। রাকিব বিব্রত বোধ করে। এখন তার কী বলা উচিত ভেবে পায় না। হঠাৎ বলে বসে, আমার নাম রাকিব। পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো। তাদের ছাদে আসা নিয়মিত হয়ে গেল। আলাপে কথায় একে অপরের কাছে অনেক সহজ হয়ে যায়। কখন দুজন দুজনার আপন হয়েছে কেউ বলতে পারে না। রাকিব আফসানাকে বলে, তোমাকে ভালোবাসি। আফসানা কিছু বলে না। মুচকি হাসি দিয়ে আফসানা ছাদ থেকে নেমে যায়। পর দিন আফসানা শাড়ি পড়ে আসে। দারুন লাগছে তাকে। নিরবে রাকিবের পেছনে এসে দাঁড়ায়। রাকিব চকিতে ফিরে তাকালে বলে, দেখো তো আমাকে কেমন লাগছে? রাকিব অবাক বিস্ময়ে বলে, বাহ! বেশ সুন্দর লাগছে তোমাকে। শাড়ি পড়েছি শুধু তোমার জন্য, তোমাকে দেখাবো বলে। রাকিব ঠোঁটে বিজয়ের হাসি। এটা কি আমার ভালোবাসা গ্রহণের স্বীকৃতি।
মনে করো তাই। আমিও তোমাকে ভালোবাসি।
দু’জন হাতে হাত ধরে ছাদে হাঁটে। কখন কে এসে যায় সেই কারণে হাতটা ছেড়ে দেয়।
আফসানার বাবা ওসমান আহমেদ গ্রামের বাড়িতে গিয়ে মেয়ের বিয়ে ঠিক করে আসে। ছেলে আর্মিতে চাকরি করে। বিয়ের দিন তারিখ সব ঠিক। আফসানার ঘর থেকে বের হওয়া বারণ। আফসানা বিয়ের কথা শুনে আতঙ্কিত হয়ে যায়। সবাই চোখে চোখে রাখে, ঘর থেকে বের হতে পারে না। আফসানার গায়ে হলুদ। সেদিন আফসানা কাজের মেয়ে ফুলিকে বলে, রাকিবদের বাসা থেকে পুতা টা নিয়ে আয়। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে পুতা কেন? বলবি আফসানা আপুর গায়ে হলুদ। পুতা লাগবে হলুদ বাঁটতে। উদ্বিগ্ন রাকিব, সে কাজের মেয়ের হাতে একটা চিঠি লিখে দেয়। লেখে, আফসানা যে করে হোক একবার ছাদে আসো। না হয় আমার মরা মুখ দেখবে। আফসানা চিঠি পেয়ে আরো বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কোন ভাবে পরিস্থিতি ম্যানেজ করে ছাদে যায়। রাকিবের মুখোমুখি হয়। তুমি ভালোবাসো আমাকে আর বিয়ে করবে আরেক জনকে? আফসানা আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। এ কথা বলেই রাকিব বোতল ভেঙে বুক কেটে ফেলে। রক্তাক্ত হয়ে পড়ে শরীর। রাকিবের এই অবস্থা দেখে ঘাবড়ে যায় আফসানা। আফসানার চিৎকারে সবাই জড়ো হয়। রাকিবকে নিতে হয় হাসপাতালে। আফসানার অভিভাবকরা বিলম্ব না করে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করে ফেলেন। শ্বশুরবাড়ি চলে যায় আফসানা। পরবর্তীতে ওসমান আহমেদ বাসা বদল করেন অন্য এলাকায়। আর যোগাযোগ হয় না রাকিব আর আফসানার।
দিন মাস বছর পেরিয়ে যায়। কে রাখে কার খবর। আফসানা জানে না রাকিব কোথায় আছে। সে এখন তিন সন্তানের মা। নিষ্ঠুর সময় সব স্মৃতি মুছে দেয়। প্রথম প্রেমের স্মৃতি
শত চেষ্টা করেও মন থেকে সরানো যায় না। অনেক জীবনেই প্রথম প্রেম সার্থক হয় না। কিন্তু সারাজীবনই মনের অগোচরে মনে রয়ে যায় প্রিয় ওই মানুষটির কথা। রাকিবের পাগলামি ভীষণ তার মনে পড়ে। ক্ষত করে তার হৃদয়কে। সম্ভাব্য সব জায়গায় রাকিবকে খোঁজ করে কিন্তু আফসানা কিছুতেই তার সন্ধান পায় না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাকিবের মঙ্গল কামনা করে। যেখানে থাক ভালো থাক সে।
Facebook Comments Box